মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।" সূরা বাকারাঃ আয়াত- ২২৩।
হাদিসে এসেছেঃ
"কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।" *মুসলিমঃ ইংরেজী অনুবাদঃ ৩৩৬৬
আবুদুল্লাহ ইবনু আমর(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ "পৃথিবীর সবকিছুই ভোগ ও ব্যবহারের সামগ্রী। আর সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট সামগ্রী হচ্ছে দ্বীনদার ও সচ্চরিত্রা স্ত্রী।" -- মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮৩, নিকাহ অধ্যায়।
বাসর রাতে যা করতে হয়ঃ
বাসর রাতের একান্ত নির্জন পরিবেশে যখন বর-কণের মাঝে প্রচন্ড মিলন স্পৃহা সৃষ্টি হবে তখন সহবাসের পূর্বক্ষণে তিনবার বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ইখলাছ এবং সূরায়ে ফালাক ও সূরায়ে নাস পড়ার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে অতঃপর সহবাসে লিপ্ত হবে।” بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا“অর্থঃ “আল্লাহ'র নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে দূরে রাখুন। আমাদেরকে যে সন্তান-সন্ততি দান করবেন, তাদেরকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে দূরে রাখুন।"
তারপর বীর্যপাতের সময় বীর্যপাতের দোয়া মনে মনে পড়বে।
র অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাতে শয়তানের কোন অংশ রাখবেন না।” তাহলে হাদীসের ভাষ্যানুসারে সে সহবাস দ্বারা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে শয়তান তার কোন অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না।
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন, এ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সহবাস-কালীন সময়ে এই দোয়া না পড়লে শয়তান প্রভাব বিস্তার করে এবং সন্তান-সন্ততির ভিতর অশান্তি ও হানাহানি সৃষ্টি হয়। [রিফাল মুসলিমীন]।
সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী একেবারে বিবস্ত্র হয়ে যাবে না।
কারণ, এতে সন্তান নির্লজ্জ হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
নবীজী (সাঃ) সহবাসের সময় নিজেকে এবং স্ত্রীকে আপাদ মস্তক চাদর কিংবা কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতেন। কথা বলতেন ক্ষীণ কন্ঠে। আর স্ত্রীকে বলতেন, উত্তেজিত হবে না। ধীরস্থির থাকবে।
নবীজী (সাঃ) আরো বলেছেনঃ
জানোয়ারের মত হঠাৎ করে স্ত্রীর উপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বেনা, বরং তার উচিত হলো প্রথমে স্ত্রী'কে চুমু খেয়ে আলিঙ্গন করবে এবং মিষ্টি মধুর কথায় তাকে আগ্রহী করে তোলা। বীর্যপাতের পর সাথে সাথে স্বামী সরে যাবে না বরং ঐ অবস্থাতেই কিছুক্ষণ স্ত্রী'র উপর পড়ে থাকবে। যাতে স্ত্রীর চাহিদা পুরা হয়ে যায়।
কেননা কোন কোন মহিলার কামসূখ দেরীতে হয়। উভয়ের হক পুরাপুরি আদায় করা উচিৎ। তারপর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আলাদা আলাদা কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান মুছে পৃথক হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের ইসলামী নিয়মানুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।" সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২২৩।
হাদিসে এসেছেঃ
"কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।" মুসলিমঃ ইংরেজী অনুবাদঃ ৩৩৬৬।
আবুদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
"পৃথিবীর সবকিছুই ভোগ ও ব্যবহারের সামগ্রী। তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট সামগ্রী হচ্ছে দ্বীনদার ও সচ্চরিত্রা স্ত্রী।" মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮৩, নিকাহ অধ্যায়।
এটা হল লজ্জাশীলতার পরিচয়।
শরীয়তে তা হারাম নয়।
ঘর বা রুম বন্ধ থাকলে এবং সেখানে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না থাকলে পর্দার দরকার নাই।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের লেবাস।
উভয়ে উভয়ের সব কিছু দেখতে পারে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।" সুরা মুমিনুনঃ আয়াতঃ ২৩:৫-৭।
"এবং যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে; কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না। অতএব, যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে, তারাই সীমালংঘনকারী।" সুরা মাআরিযঃ আয়াতঃ ৭০:২৯-৩১।
[মালিকানাভূক্ত দাসী বলতে আমাদের বাড়ী-ঘরে কাজের মেয়ে নয় বরং জিহাদের ময়দানে বন্দীকৃত নারীদেরকে গনিমতের মাল হিসাবে ধরা হয়েছে। ঐ ব্যবস্থা রহিত করা হয়েছে]।
স্বামী-স্ত্রী বিবস্ত্র হয়ে সহবাস করতে শরীয়তে কোন বাধা নাই এবং একে অপরের গোপন অংগ দেখতে পারবে। ফাতওয়া ইবনে উসাইমিন।
রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্যের নিকটে গোপনাংগের হেফাজত কর।
সাহাবী বললেনঃ হে রাসুল (সাঃ)! লোকেরা আপোসে এক যায়গায় থাকলে?
তিনি বললেনঃ যথাসাধ্য চেস্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পারে।
সাহাবী বললেনঃ হে রাসুল (সাঃ)! কেউ যদি নির্জনে থাকে?
তিনি বললেনঃ মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।"
আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, মিশকাতঃ ৩১১৭।
মন্তব্যঃ
স্বামী তার স্ত্রী'কে যেভাবে খুশী ব্যবহার করবে এতে কোন বাধা নাই।
তবে যোনী পথ ছাড়া পায়ু পথ ব্যবহার করা হারাম।
বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লাহ তাআলা এর চিরস্থায়ীত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে ? অথচ তোমরা পরস্পর শয়ন সঙ্গী হয়েছ এবং তোমাদের নিকট সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:২১।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২২৭।
আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।
১) দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক সততা, বিশ্বস্ততা ও সদ্ভাব প্রদর্শন করা।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে বা ভাল আচরণ কর।"
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১৮।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।’
ইবনে মাজাহঃ ১৯৬৭।
২) পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা।এর জন্য আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামী স্ত্রী প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন যাপনেরও অংশ।
ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) বলেছেনঃ
‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’
তবে, পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।
৩) বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা।সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
'কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।' মুসলিমঃ ২৫৯৭।
৪) পরস্পর শুভ কামনা করা, সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া।আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার। দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা উভয়েরই কর্তব্য।আর এর অন্তরভূক্ত হচ্ছে, পরস্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা ।সন্তানদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের সহযোগী।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।" সূরা মায়েদাঃ আয়াতঃ ৫:২।
১) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৩৪।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেছেনঃ 'যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।' আহমাদঃ ১৫৭৩।
স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুসরণ করা।
২) স্বামীর বাসস্থানে অবস্থান করা।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না।" সূরা আহযাবঃ আয়াতঃ ৩৩:৩৩।
ইবনে উমর (রাদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ 'আল্লাহর বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহর ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না।' বুখারীঃ ৮৪৯।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিঃ)- এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী (রাদিঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলতেনঃ 'তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।' মুসলিমঃ ৬৭৪।
৩) নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা।
সূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ বুখারীঃ ২৫৪৬।
৪) নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা।
৫) স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া। হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমনঃ ভাই বা আত্মীয় স্বজন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ মুসলিমঃ ২১৩৭।
মীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল— স্বামীর আনুগত্য ফরজ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।' বুখারীঃ ৪৭৬৯।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য, সুখকর দাম্পত্য জীবন, সুশৃঙ্খল পরিবার, পরার্থপরতায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট রাখার স্বার্থে ইসলাম জীবন সঙ্গী স্বামীর উপর কতিপয় অধিকার আরোপ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে প্রদত্ত হল।
১) দেন মোহর।
নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৪।
২) ভরন পোষণ।
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।" সূরা তালাকঃ আয়াতঃ ৬৫:৭।
৩) স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা।
স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।” বুখারী।
৪) স্ত্রীর ব্যাপারে আত্ম-মর্যাদাশীল হওয়া।
হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেছেনঃ
‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাচ্ছি না।’ বুখারীঃ ৪৭০৬।
নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ। আমি তার চেয়ে বেশি আত্মসম্মানবোধ করি,আবার আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি অহমিকা সম্পন্ন।’
মুসলিমঃ ২৭৫৫।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহিঃ) বলেছেনঃ
'যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)।'
হাদিসে এসেছেঃ
‘দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ দারেমীঃ ৩৩৯৭।
মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এবং অধীনস্থগণ।
র অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাতে শয়তানের কোন অংশ রাখবেন না।” তাহলে হাদীসের ভাষ্যানুসারে সে সহবাস দ্বারা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে শয়তান তার কোন অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না।
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন, এ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সহবাস-কালীন সময়ে এই দোয়া না পড়লে শয়তান প্রভাব বিস্তার করে এবং সন্তান-সন্ততির ভিতর অশান্তি ও হানাহানি সৃষ্টি হয়। [রিফাল মুসলিমীন]।
সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী একেবারে বিবস্ত্র হয়ে যাবে না।
কারণ, এতে সন্তান নির্লজ্জ হয়ে জন্মগ্রহণ করে।
নবীজী (সাঃ) সহবাসের সময় নিজেকে এবং স্ত্রীকে আপাদ মস্তক চাদর কিংবা কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতেন। কথা বলতেন ক্ষীণ কন্ঠে। আর স্ত্রীকে বলতেন, উত্তেজিত হবে না। ধীরস্থির থাকবে।
নবীজী (সাঃ) আরো বলেছেনঃ
জানোয়ারের মত হঠাৎ করে স্ত্রীর উপর কেউ ঝাঁপিয়ে পড়বেনা, বরং তার উচিত হলো প্রথমে স্ত্রী'কে চুমু খেয়ে আলিঙ্গন করবে এবং মিষ্টি মধুর কথায় তাকে আগ্রহী করে তোলা। বীর্যপাতের পর সাথে সাথে স্বামী সরে যাবে না বরং ঐ অবস্থাতেই কিছুক্ষণ স্ত্রী'র উপর পড়ে থাকবে। যাতে স্ত্রীর চাহিদা পুরা হয়ে যায়।
কেননা কোন কোন মহিলার কামসূখ দেরীতে হয়। উভয়ের হক পুরাপুরি আদায় করা উচিৎ। তারপর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই আলাদা আলাদা কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান মুছে পৃথক হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা আমাদের ইসলামী নিয়মানুযায়ী চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী বিবস্ত্র হওয়া এবং স্ত্রী'কে স্বাধীনভাবে ব্যবহার
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে ব্যবহার কর। আর নিজেদের জন্য আগামী দিনের ব্যবস্থা কর এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে জেনে রাখ যে, আল্লাহর সাথে তোমাদেরকে সাক্ষাত করতেই হবে। আর যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে দাও।" সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২২৩।
হাদিসে এসেছেঃ
"কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর বিছানা পরিহার করে রাত কাটায় তবে ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।" মুসলিমঃ ইংরেজী অনুবাদঃ ৩৩৬৬।
আবুদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
"পৃথিবীর সবকিছুই ভোগ ও ব্যবহারের সামগ্রী। তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও উৎকৃষ্ট সামগ্রী হচ্ছে দ্বীনদার ও সচ্চরিত্রা স্ত্রী।" মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০৮৩, নিকাহ অধ্যায়।
সহবাসের সময় স্বামী-স্ত্রী বিবস্ত্র হওয়া
এটা হল লজ্জাশীলতার পরিচয়।
শরীয়তে তা হারাম নয়।
ঘর বা রুম বন্ধ থাকলে এবং সেখানে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না থাকলে পর্দার দরকার নাই।
স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের লেবাস।
উভয়ে উভয়ের সব কিছু দেখতে পারে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।" সুরা মুমিনুনঃ আয়াতঃ ২৩:৫-৭।
"এবং যারা তাদের যৌন-অঙ্গকে সংযত রাখে; কিন্তু তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভূক্ত দাসীদের বেলায় তিরস্কৃত হবে না। অতএব, যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে, তারাই সীমালংঘনকারী।" সুরা মাআরিযঃ আয়াতঃ ৭০:২৯-৩১।
[মালিকানাভূক্ত দাসী বলতে আমাদের বাড়ী-ঘরে কাজের মেয়ে নয় বরং জিহাদের ময়দানে বন্দীকৃত নারীদেরকে গনিমতের মাল হিসাবে ধরা হয়েছে। ঐ ব্যবস্থা রহিত করা হয়েছে]।
স্বামী-স্ত্রী বিবস্ত্র হয়ে সহবাস করতে শরীয়তে কোন বাধা নাই এবং একে অপরের গোপন অংগ দেখতে পারবে। ফাতওয়া ইবনে উসাইমিন।
রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ "তুমি তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্যের নিকটে গোপনাংগের হেফাজত কর।
সাহাবী বললেনঃ হে রাসুল (সাঃ)! লোকেরা আপোসে এক যায়গায় থাকলে?
তিনি বললেনঃ যথাসাধ্য চেস্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পারে।
সাহাবী বললেনঃ হে রাসুল (সাঃ)! কেউ যদি নির্জনে থাকে?
তিনি বললেনঃ মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।"
আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, মিশকাতঃ ৩১১৭।
মন্তব্যঃ
স্বামী তার স্ত্রী'কে যেভাবে খুশী ব্যবহার করবে এতে কোন বাধা নাই।
তবে যোনী পথ ছাড়া পায়ু পথ ব্যবহার করা হারাম।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে ? অথচ তোমরা পরস্পর শয়ন সঙ্গী হয়েছ এবং তোমাদের নিকট সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:২১।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২:২২৭।
আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।
যে সব অধিকারের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সমানঃ
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে বা ভাল আচরণ কর।"
***সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:১৮।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।’
ইবনে মাজাহঃ ১৯৬৭।
২) পরস্পর একে অপরকে উপভোগ করা।এর জন্য আনুষঙ্গিক যাবতীয় প্রস্তুতি ও সকল উপকরণ গ্রহণ করা। যেমন সাজগোজ, সুগন্ধি ব্যবহার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ দুর্গন্ধ ও ময়লা কাপড় পরিহার ইত্যাদি। স্বামী স্ত্রী প্রত্যেকের এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা। অধিকন্তু এগুলো সদ্ভাবে জীবন যাপনেরও অংশ।
ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) বলেছেনঃ
‘আমি যেমন আমার জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।’
তবে, পরস্পর এ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উভয়কেই হারাম সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ বস্তু হতে বিরত থাকতে হবে।
৩) বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা।সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
'কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়।' মুসলিমঃ ২৫৯৭।
৪) পরস্পর শুভ কামনা করা, সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়া।আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একে অপর থেকে উপদেশ পাওয়ার অধিক হকদার। দাম্পত্য জীবন রক্ষা করা উভয়েরই কর্তব্য।আর এর অন্তরভূক্ত হচ্ছে, পরস্পর নিজ আত্মীয়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা ।সন্তানদের লালন-পালন ও সুশিক্ষার ব্যাপারে উভয়েই সমান, একে অপরের সহযোগী।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ব্যপারে পরস্পরকে সহযোগিতা কর।" সূরা মায়েদাঃ আয়াতঃ ৫:২।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যঃ
১) ভাল ও সৎ কাজ এবং আল্লাহর বিধান বিরোধী নয় এমন সকল বিষয়ে স্বামীর আনুগত্য করা। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। যে নির্দেশ কিংবা চাহিদা পূরণে কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, সে ব্যাপারে স্বামীর আনুগত্য করা।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৩৪।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেছেনঃ 'যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে।' আহমাদঃ ১৫৭৩।
স্বামীর কর্তব্য, এ সকল অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুসরণ করা।
২) স্বামীর বাসস্থানে অবস্থান করা।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা স্ব স্ব গৃহে অবস্থান কর, প্রাচীন যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদের কে প্রদর্শন করে বেড়িও না।" সূরা আহযাবঃ আয়াতঃ ৩৩:৩৩।
ইবনে উমর (রাদিঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ 'আল্লাহর বান্দিদেরকে তোমরা আল্লাহর ঘরে যেতে বাধা দিয়ো না।' বুখারীঃ ৮৪৯।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাদিঃ)- এর স্ত্রী যয়নব সাকাফী (রাদিঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলতেনঃ 'তোমাদের কেউ মসজিদে যাওয়ার ইচ্ছে করলে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।' মুসলিমঃ ৬৭৪।
৩) নিজের ঘর এবং সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ করা। স্বামীর সাধ্যের অতীত এমন কোন আবদার কিংবা প্রয়োজন পেশ না করা।
সূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘরের জিম্মাদার। এ জিম্মাদারির ব্যাপারে তাকে জবাবদেহিতার সম্মুখীন করা হবে।’ বুখারীঃ ২৫৪৬।
৪) নিজের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষা করা।
৫) স্বামীর অপছন্দনীয় এমন কাউকে তার ঘরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া। হোক না সে নিকট আত্মীয় কিংবা আপনজন। যেমনঃ ভাই বা আত্মীয় স্বজন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘তোমাদের অপছন্দনীয় কাউকে বিছানায় জায়গা না দেয়া স্ত্রীদের কর্তব্য।’ মুসলিমঃ ২১৩৭।
মীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত নফল রোজা না রাখা। কারণ, রোজা নফল— স্বামীর আনুগত্য ফরজ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
'নারীর জন্য স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা বৈধ নয়। অনুরূপ ভাবে অনুমতি ব্যতীত তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়াও বৈধ নয়।' বুখারীঃ ৪৭৬৯।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকারঃ
১) দেন মোহর।
নারীর দেন মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও।" সূরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৪।
২) ভরন পোষণ।
সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর মর্তবার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে।অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।" সূরা তালাকঃ আয়াতঃ ৬৫:৭।
৩) স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়া-পরবশ থাকা।
স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর।” বুখারী।
৪) স্ত্রীর ব্যাপারে আত্ম-মর্যাদাশীল হওয়া।
হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেছেনঃ
‘আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাচ্ছি না।’ বুখারীঃ ৪৭০৬।
নারীদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
‘তোমরা সা’আদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ। আমি তার চেয়ে বেশি আত্মসম্মানবোধ করি,আবার আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি অহমিকা সম্পন্ন।’
মুসলিমঃ ২৭৫৫।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহিঃ) বলেছেনঃ
'যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)।'
হাদিসে এসেছেঃ
‘দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ দারেমীঃ ৩৩৯৭।
মানুষের সবচেয়ে বেশি আত্মমর্যাদার বিষয় নিজের পরিবার। এর ভেতর অগ্রাধিকার প্রাপ্ত স্বীয় স্ত্রী। অতঃপর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন এবং অধীনস্থগণ।